বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতার কাছে জিলাপি খেতে চাওয়া ওসি প্রত্যাহার

  • Reporter Name
  • Update Time : ০৪:৫৩:১৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৫ এপ্রিল ২০২৫
  • ১০ Time View

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এক নেতার কাছে জিলাপি খেতে চাওয়া কিশোরগঞ্জের ইটনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মনোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। প্রত্যাহার করা হয়েছে তাঁকে।রাত পৌনে আটটার দিকে কিশোরগঞ্জ পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাছান চৌধুরী প্রথম আলোকে বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, অফিস আদেশে ওই ওসিকে প্রত্যাহার করে জেলা পুলিশ লাইনসে সংযুক্ত করা হয়েছে।

হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধের কাজের টাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এক নেতার কাছে জিলাপি খেতে চেয়েছিলেন ইটনা থানার ওসি মো. মনোয়ার হোসেন। এ–সংক্রান্ত একটি অডিও রেকর্ড গতকাল সোমবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয়দের মধ্যে সমালোচনা শুরু হয়।

কথোপকথনে ওসি মনোয়ার হোসেনকে বলতে শোনা যায়, ‘সেফটি সিকিউরিটি দিলাম তো সারা জীবন। তোমরা যে ১৮ লাখ টাকার কাজ করে ১০ লাখ টাকা লাভ করলা, ১০ টাকার জিলাপি কিনে তো পাবলিকেরে খাওয়ালে না। খাইয়া যে একটু দোয়া কইরা দেই বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের। তোমার জায়গায় আমি হইলে সুদের ওপরে টাকা আইনা আগের জিলাপি খাওয়াইতাম। দোয়াডা হইল সবার আগে।’ অডিওতে ওসিকে আরও বলেন, ‘ঠিক আছে, তাহলে জিলাপির অপেক্ষায় রইলাম, নাকি?’

এ সময় অপর পক্ষ থেকে বলতে শোনা যায়, ‘শুধু জিলাপি না, অন্য কিছু?’ ওসি বলেন, ‘না না, জিলাপি হইলেই হইব। এক প্যাঁচ, আধা প্যাঁচ জিলাপি দিলে হইব। বিভিন্ন পারপাসে হইলে পাবলিক খাইল আর কী, বোঝ না?’ এ সময় ছাত্রনেতা বলেন, ‘বিলটিল পাই, একটা অ্যামাউন্ট দেখবনে।’ এ কথার উত্তরে ওসি বলেন, ‘ঠিক আছে।’

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ওসির সঙ্গে মুঠোফোনে ওই কথোপকথনে অপর প্রান্তে ছিলেন আফজাল হুসাইন ওরফে শান্ত। তিনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ইটনা উপজেলার সংগঠক। তিনি ইটনা সদর ইউনিয়নের ফসলরক্ষা বাঁধের কাজ করেছেন।

কিশোরগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, মো. নাজমুল ঠাকুর নামে ইটনা সদর ইউনিয়নের বলদা খেয়াঘাট থেকে শেরপুর সেতু পর্যন্ত ১ হাজার ৪৮০ মিটার ডুবন্ত বাঁধ নির্মাণ প্রকল্প বাঁধ মেরামতের একটি কাজ রয়েছে। এর প্রাক্বলিত মাটির পরিমাণ ৯ হাজার ৬ দশমিক ৫৩ ঘন মিটার। প্রাক্বলিত ব্যয় ১৯ লাখ ৩৫ হাজার টাকা। আফজাল হুসাইনের দাবি এই কাজই তিনি করেন। নাজমুল ঠাকুর তাঁর ব্যবসায়ী পার্টনার। নাজমুল ঠাকুরও বিষয়টি স্বীকার করেন।

আফজাল হুসাইন বলেন, তাঁরা ইটনা উপজেলার বলদা হাওরে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ১৪৮০ মিটার ফসলরক্ষা বাঁধের একটা কাজ পান। কাজ শেষ হওয়ার পরে থানায় গেলে তিনি (ওসি) জিলাপি খেতে টাকা চাইতেন। আফজাল বলেন, ‘তখন রেকর্ড করতে পারিনি। পরে ওসির সঙ্গে ফোনে আমার কথা হলে তিনি আবার আমার কাছে ফসলরক্ষা বাঁধ করে যে লাভ হয়েছে, সেখান থেকে জিলাপি খেতে চান।’

এ বিষয়ে ওসি মনোয়ার হোসেন জানিয়েছিলেন, অডিও রেকর্ডটি তিনি শুনেছেন। মজার ছলে তিনি ওই ব্যক্তির কাছে জিলাপি খেতে চেয়েছিলেন বলে তাঁর দাবি। টাকার কথাগুলো এআই দিয়ে এডিট করা হয়ে থাকতে পারে বলে তাঁর ধারণা। ওসি আরও বলেন, ‘গত দুই মাস ধরে আমার সঙ্গে আফজালের কোনো কথা হয়েছে বলে মনে পড়ছে না। প্রায় দুই মাস হলো থানার পাশের মসজিদে আমার টাকায় জিলাপি বণ্টনের সময় ওর ফোন আসে। সে সময় আমি মজার চলে জিলাপির কথা বলেছি। এখন এত দিন পরে ওই অডিও ফাঁস আবার ফেসবুকে একধরনের থ্রেট দিয়ে আমার বিরুদ্ধে স্ট্যাটাস। সব মিলিয়ে বিষয়টি আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র মনে হচ্ছে।’ পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাছান চৌধুরী বলেন, ওসি মনোয়ার হোসেনকে প্রত্যাহার করে ইটনা থানায় নতুন ওসি দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া প্রকাশ হওয়া ফোনালাপ নিয়ে তদন্ত চলছে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

MAHFUZ MIA

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতার কাছে জিলাপি খেতে চাওয়া ওসি প্রত্যাহার

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতার কাছে জিলাপি খেতে চাওয়া ওসি প্রত্যাহার

Update Time : ০৪:৫৩:১৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৫ এপ্রিল ২০২৫

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এক নেতার কাছে জিলাপি খেতে চাওয়া কিশোরগঞ্জের ইটনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মনোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। প্রত্যাহার করা হয়েছে তাঁকে।রাত পৌনে আটটার দিকে কিশোরগঞ্জ পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাছান চৌধুরী প্রথম আলোকে বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, অফিস আদেশে ওই ওসিকে প্রত্যাহার করে জেলা পুলিশ লাইনসে সংযুক্ত করা হয়েছে।

হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধের কাজের টাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এক নেতার কাছে জিলাপি খেতে চেয়েছিলেন ইটনা থানার ওসি মো. মনোয়ার হোসেন। এ–সংক্রান্ত একটি অডিও রেকর্ড গতকাল সোমবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয়দের মধ্যে সমালোচনা শুরু হয়।

কথোপকথনে ওসি মনোয়ার হোসেনকে বলতে শোনা যায়, ‘সেফটি সিকিউরিটি দিলাম তো সারা জীবন। তোমরা যে ১৮ লাখ টাকার কাজ করে ১০ লাখ টাকা লাভ করলা, ১০ টাকার জিলাপি কিনে তো পাবলিকেরে খাওয়ালে না। খাইয়া যে একটু দোয়া কইরা দেই বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের। তোমার জায়গায় আমি হইলে সুদের ওপরে টাকা আইনা আগের জিলাপি খাওয়াইতাম। দোয়াডা হইল সবার আগে।’ অডিওতে ওসিকে আরও বলেন, ‘ঠিক আছে, তাহলে জিলাপির অপেক্ষায় রইলাম, নাকি?’

এ সময় অপর পক্ষ থেকে বলতে শোনা যায়, ‘শুধু জিলাপি না, অন্য কিছু?’ ওসি বলেন, ‘না না, জিলাপি হইলেই হইব। এক প্যাঁচ, আধা প্যাঁচ জিলাপি দিলে হইব। বিভিন্ন পারপাসে হইলে পাবলিক খাইল আর কী, বোঝ না?’ এ সময় ছাত্রনেতা বলেন, ‘বিলটিল পাই, একটা অ্যামাউন্ট দেখবনে।’ এ কথার উত্তরে ওসি বলেন, ‘ঠিক আছে।’

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ওসির সঙ্গে মুঠোফোনে ওই কথোপকথনে অপর প্রান্তে ছিলেন আফজাল হুসাইন ওরফে শান্ত। তিনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ইটনা উপজেলার সংগঠক। তিনি ইটনা সদর ইউনিয়নের ফসলরক্ষা বাঁধের কাজ করেছেন।

কিশোরগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, মো. নাজমুল ঠাকুর নামে ইটনা সদর ইউনিয়নের বলদা খেয়াঘাট থেকে শেরপুর সেতু পর্যন্ত ১ হাজার ৪৮০ মিটার ডুবন্ত বাঁধ নির্মাণ প্রকল্প বাঁধ মেরামতের একটি কাজ রয়েছে। এর প্রাক্বলিত মাটির পরিমাণ ৯ হাজার ৬ দশমিক ৫৩ ঘন মিটার। প্রাক্বলিত ব্যয় ১৯ লাখ ৩৫ হাজার টাকা। আফজাল হুসাইনের দাবি এই কাজই তিনি করেন। নাজমুল ঠাকুর তাঁর ব্যবসায়ী পার্টনার। নাজমুল ঠাকুরও বিষয়টি স্বীকার করেন।

আফজাল হুসাইন বলেন, তাঁরা ইটনা উপজেলার বলদা হাওরে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ১৪৮০ মিটার ফসলরক্ষা বাঁধের একটা কাজ পান। কাজ শেষ হওয়ার পরে থানায় গেলে তিনি (ওসি) জিলাপি খেতে টাকা চাইতেন। আফজাল বলেন, ‘তখন রেকর্ড করতে পারিনি। পরে ওসির সঙ্গে ফোনে আমার কথা হলে তিনি আবার আমার কাছে ফসলরক্ষা বাঁধ করে যে লাভ হয়েছে, সেখান থেকে জিলাপি খেতে চান।’

এ বিষয়ে ওসি মনোয়ার হোসেন জানিয়েছিলেন, অডিও রেকর্ডটি তিনি শুনেছেন। মজার ছলে তিনি ওই ব্যক্তির কাছে জিলাপি খেতে চেয়েছিলেন বলে তাঁর দাবি। টাকার কথাগুলো এআই দিয়ে এডিট করা হয়ে থাকতে পারে বলে তাঁর ধারণা। ওসি আরও বলেন, ‘গত দুই মাস ধরে আমার সঙ্গে আফজালের কোনো কথা হয়েছে বলে মনে পড়ছে না। প্রায় দুই মাস হলো থানার পাশের মসজিদে আমার টাকায় জিলাপি বণ্টনের সময় ওর ফোন আসে। সে সময় আমি মজার চলে জিলাপির কথা বলেছি। এখন এত দিন পরে ওই অডিও ফাঁস আবার ফেসবুকে একধরনের থ্রেট দিয়ে আমার বিরুদ্ধে স্ট্যাটাস। সব মিলিয়ে বিষয়টি আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র মনে হচ্ছে।’ পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাছান চৌধুরী বলেন, ওসি মনোয়ার হোসেনকে প্রত্যাহার করে ইটনা থানায় নতুন ওসি দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া প্রকাশ হওয়া ফোনালাপ নিয়ে তদন্ত চলছে।